বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সার্বজনীন করার ক্ষেত্রে কাযকর ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিনিয়ত স্থান করে নিচ্ছে আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই। আর সাথে সাথে আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকাও রাখছে। তথ্যপ্রযুক্তি এক ধরনের সমন্বিত প্রযুক্তি, যা তথ্যের মধ্য দিয়ে কাজ করে। আজ সারা বিশ্ব প্রযুক্তির পিঠে দাড়িয়ে আছে। তথ্যপ্রযুক্তি হলো সেই প্রযুক্তির মধ্যে অন্যতম।গত শতকের আশির দশকে মাইক্রো কম্পিউটারের আগমনের পূর্বে কম্পিউটারগুলো গবেষণা ছাড়া অন্যকোন কাজে ব্যবহার করা হতো না। বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে প্রথম কম্পিউটার আসে। কিন্তু আমাদের দেশে এর প্রয়োগ ও ব্যবহার বৃদ্ধি পায় আশি দশকের শেষে। আমাদের দেশে যেমন শত সমস্যা ও সংকট আছে, ঠিক তেমনি তার থেকেও বেশি সম্ভাবনাও আছে। যদিও আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আমাদের তুলনায় দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এরপরও বলবো আমরা তাদের থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। ভারত সরকার ১৯৮৬ সালে তাদের আইসিটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। আর আমরা আইসিটি নীতিমালা পেয়েছি ২০০৯ সালে। তারপরও থেমে নেই আমাদের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ই-গভর্নেন্স, ই-সেবা, ই-শিক্ষা সহ সর্বক্ষেত্রে আমাদের দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক মানুষের কাছে সুলভে খুব সহজে এবং দ্রুত তথ্য ও সেবা পৌছিয়ে দেওয়ার জন্য “জনগনের দোড়গোড়ায় সেবা” শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ৪৫৪৫টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি), ৩১৯টি পৌরসভা ডিজিটাল সেন্টার (পিডিসি) এবং ৪০৭টি সিটি ডিজিটাল সেন্টার (সিডিসি)। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেন- ‘জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য অর্জনে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।’ সুতরাং বলা যায় অবাধ তথ্য প্রবাহ জনগণের ক্ষমতায়নের অন্যতম পূর্ব শর্ত। আর এ কারণেই আমাদের এই ডিজিটাল সেন্টার এর পথচলা। প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টার কেন্দ্রে ১জন পুরুষ ও ১জন মহিলা মোট ২জন করে উদ্দোক্তা আছে। প্রত্যেক উদ্দোক্তারই তথ্যপ্রযুক্তির উপর পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে। তাছাড়া জেলা পর্যায়ে তাদের নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্দোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।আজ ডিজিটাল সেন্টার কেন্দ্রের উদ্দোক্তাগণ নিজেরা সাবলম্বি হয়েছে আর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করে মানবকে সম্পদে রুপান্তরে অগ্রণি ভুমিকা রাখছে। আর যে কোন কাজে জনগনের ভোগান্তি এখন আর নেই বললেই চলে। একজন গ্রামের কৃষক কখনই ভাবতে পারিনি- জেলা শহরে না গিয়ে গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের ইউডিসি বা পিডিসি-তে বসেই জমির পর্চার জন্য আবেদন করা যাবে। এখন একজন গ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থীর কাছে ঢাকায় না গিয়ে গ্রামে বসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম পুরণ স্বপ্ন যেন বাস্তবে রুপান্তর। এ যেন ফরম পূরণ নয় স্বপ্নপুরন। এখন চাকুরীর জন্য আবেদন হাতে লিখতে হয় না। অন-লাইনে পূরণ করে আবার অন-লাইন থেকেই ইন্টারভিউ কার্ডটি ডাউনলোড করতে হয়। এ যেন চাওয়ার থেকে পাওয়া বেশি। ডিজিটাল সেন্টার কেন্দ্রগুলো আরও যেসব সেবা দিচ্ছেঃ: ই-বুক ডাউনলোড : অন-লাইনে পন্যের বাজার মূল্য যাচাই তথা ই-কমার্স সাইটের মাধ্যমে কেনাকাটা : অন-লাইনে কল্যাণ ট্রাস্ট এর আবেদন : অন-লাইনে অবসর সুবিধা বোর্ডের আবেদন : সকল শিক্ষা বোর্ডের অন-লাইন রেজিষ্ট্রেশন ফরম পূরণ : অন-লাইন শিক্ষক নিবন্ধণ সিস্টেম : অন-লাইন বিল পেমেন্ট সিস্টেম : অন-লাইন ভিসা চেকিং : অন-লাইনে এমআর পাসপোর্ট এর আবেদন : বিএমইটি-র মাধ্যমে অন-লাইনে বিদেশে চাকুরীর জন্য রেজিষ্ট্রেশন : থানায় অন-লাইন জিডি : মোবাইলের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা (টেলিমেডিসিন) : বিএসটিআই এর লাইসেন্স এর জন্য অন-লাইন আবেদন : অন-লাইনে সকল পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রাপ্তি : অন-লাইনে এবং মোবাইলের মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট ক্রয় : বিভিন্ন বীমা পলিসি বিক্রয় : ছবি তোলা : অন-লাইনে বিভিন্ন ফরম পূরণ : কম্পিউটার কম্পোজ : ভিডিও এডিটিং : ফটোকপি : স্ক্যানিং : লেমিনেটিং : মোবাইল সার্ভিসিং ও কম্পিউটার সার্ভিসিং একই স্থানে বসে এতগুলো কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা হয় সকল ডিজিটাল সেন্টার কেন্দ্র হতে। অনেকটা আলাউদ্দিনের চ্যারাগ এর মত। তাই বলতেই হয়- “ডিজিটাল সেন্টার”- ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অব্যাহত অভিযাত্রা।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস